আজ আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস - রাষ্ট্রীয় ব্লগ | রাষ্ট্রীয় ব্লগ | জাতীয় ও মানবিক ঐক্যপ্রয়াস
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া

    আজ আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস

      প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর ২০২২ , ১০:০৫:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    জহির সিকদার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

    আজ ১১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হটিয়ে আশুগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করেন। আশুগঞ্জকে মুক্ত করতে গিয়ে সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন সুবেদার মেজর সিরাজুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক আব্দুল হাই, সিপাহী কফিল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরসহ আরও অনেকে।

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত হওয়ার পর একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় ট্যাংক বর্তমান আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর গ্রাম দিয়ে আশুগঞ্জ সদরে প্রবেশ করে। সর্বশেষ যুদ্ধ হয় আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুরে। তিন দিনের তুমুল যুদ্ধে মিত্রবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর পাঁচ শোরও বেশি সৈনিক নিহত হন। সোহাগপুরের ভয়াবহ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর তিনটি ট্যাংক ধ্বংস হয়।

    শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর ভয়াবহ আক্রমণে টিকতে না পেরে ১০ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে আশুগঞ্জ থেকে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যেতে শুরু করেন।রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর কয়েক হাজার সৈন্য আশুগঞ্জ ত্যাগ করে মেঘনার পশ্চিম তীরে ভৈরবে গিয়ে আশ্রয় নেয় ৬ ডিসেম্বরের পর থেকেই সিলেট ব্রাহ্মণ্বাড়িয়া এলাকা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য আশুগঞ্জে এসে অবস্থান নেয়।

    ০৯ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্র বাহিনী ট্যাংক নিয়ে আশুগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর হামলা চালায়। বিপুল সংখ্যক হানাদার বাহিনী ভারতীয় মিত্র বাহিনীর উপর পাল্টা হামলা চালায়। উভয়পক্ষ এই যুদ্ধে ট্যাংক ও যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে। ভয়াবহ যুদ্ধের উভয় পক্ষের কয়েকশত সৈন্য নিহত হয়। ঐদিনই পাকিস্তানি হানাদাররা মেঘনা নদীর উপর রেলসেতুটি ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে দেয়।

    সেতুটির দুটি স্প্যান ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ উপজেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ হানাদার মুক্ত হলেও ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আশুগঞ্জে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী এবং ভৈরবে অবস্থানরত পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। এ বিষয়ে মুদ্রিত একটি বই যা মুক্তযুদ্ধ ভিত্তিক গবেষণা গ্রন্থ “মুক্তিযুদ্ধ এবং আশুগঞ্জ” গ্রন্থে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল।

    দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ভৈরবের মেঘনা নদীর উপর নির্মিত দেশের রেলসেতুটি শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাকবাহিনী। এতে রেলসেতুর ভৈরব পাড়ের দুইটি স্প্যান ও আশুগঞ্জ পাড়ের একটি স্প্যান জয়েন্ট খুলে পানিতে পড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ওই এলাকার কমান্ডার মো. সায়দুল্লাহ মিয়া জানান, ঘটনার সময় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার আজবপুরে অবস্থিত যৌথবাহিনীর ক্যাম্প থেকে ভৈরবের আগানগরের জগমোহনপুরে তার ক্যাম্পে ফিরছিলেন।

    তিনি তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে তখন মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছিলেন। রাজধানী ঢাকার দিকে অগ্রসরমান বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর অগ্রগামীতায় বাঁধা সৃষ্টি করতেই হানাদার বাহিনী এই সেতুটি ধ্বংস করে দেয়।

    এর আগে ২ ডিসেম্বর ভারতীয় যুদ্ধ বিমান দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর ভৈরবের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর কয়েকবার হামলা চালায়।

    + আত্মরক্ষার জন্য পাক বাহিনী আশুগঞ্জ থেকে পালিয়ে ভৈরব যাওয়ার সময় মেঘনা নদীর ওপর রেল সেতুটির একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। সেতুটির দুটি স্প্যান ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ উপজেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।

    ৮ ডিসেম্বর পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর পূর্বাঞ্চল সেক্টর আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চরম মার খেয়ে প্রায় ১০/১২ হাজার পাকসেনা আশুগঞ্জ পাড়ি দিয়ে ভৈরব আশ্রয় নেয়।

    হানাদার বাহিনীর ধারণা ছিল ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা রেলসেতু দিয়ে হেঁটে ভৈরবে আক্রমণ করবে। যে কারণে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে তারা ডিনামাইট দিয়ে সেতুর তিনটি স্প্যান ভেঙ্গে দেয়।

    এ ছাড়া এদিন তারা ভৈরবের তৎকালীন ন্যাশনাল বর্তমান সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি ডিনামাইটের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়ে দেয়।

    এছাড়াও এদিন হানাদারা ভৈরব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রেলওয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মারাত্মক ক্ষতি করে।

    পরে দেশ স্বাধীন হবার দুই বছর পর পূনঃনির্মাণ শেষে ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেতুটির উদ্বোধন করেন। তখন সেতুটির নামকরণ করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার আব্দুল হালিমের নামে ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’।

    জানা যায়, তৎকালীন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেতুটির নামকরণ হওয়ার কথা ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে জানতে পারলেন এখানে যুদ্ধ চলাকালীন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তার নাম হাবিলদার আব্দুল হালিম।

    বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত পাল্টে সেতুটির নামকরণ করেন ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’। মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার শহীদ আব্দুল হালিমের বাড়ি চাঁদপুরের তরপুচণ্ডী গ্রামে। তার বাবার নাম আলী হোসেন।

    হাবিলদার আব্দুল হালিম মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ৭১ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন কুমিল্লা জেলার কসবা থানার চাঁদপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন।

    উল্লেখ ১৪ এপ্রিল আশুগঞ্জ প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং ০৯ ডিসেম্বর সোহাগপুরের যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসাবে বিবেচিত হয়।আশুগঞ্জ মুক্ত দিবসে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

    প্রতিবছরের মতো এবারও দিবসটি পালন উপলক্ষে আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্ত দিবস উদ্‌যাপন কমিটি দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জহির সিকদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ