প্রতিনিধি ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:৪৭:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
রাষ্ট্রীয় ব্লগ ডেস্কঃ
লুসাইল স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নেমেই দু’টি রেকর্ড করে ফেললেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে সর্বাধিক ম্যাচের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন এবং আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের মালিক হলেন। এত দিন তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছিল বিশ্বকাপের ২৪টি ম্যাচ। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার সাথে সাথে হয়ে গেল ২৫টি ম্যাচ। বিশ্বকাপে এত দিন সর্বাধিক ২৫টি ম্যাচ খেলে শীর্ষে ছিলেন জার্মানির লোথার ম্যাথাউস। এবার তার সঙ্গী হলেন মেসি। ফাইনালে খেলতে নামলেই ছাড়িয়ে যাবেন সবাইকে।
আজ সেমিফাইনাল খেলতে নেমে আরো একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন মেসি। বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ১৮টি ম্যাচ খেলে মেক্সিকোর সাবেক অধিনায়ক রাফায়েল মার্কুয়েজের সাথে সহবস্থানে ছিলেন মেসি। গতকাল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার পর অধিনায়ক হিসেবে ১৯ ম্যাচ হলো মেসির। বিশ্বকাপে এটাও একটা রেকর্ড।
পেনাল্টি থেকে গোল করে আরো একটি রেকর্ড গড়লেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে মেসি এবং গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার গোল ছিল সমান ১০টি করে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোল করে বাতিস্তুতাকে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। গতকাল পেনাল্টি থেকে গোল করে নতুন রেকর্ড গড়লেন। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে এখন সর্বোচ্চ ১১টি গোল তার।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে প্রথম থেকে আর্জেন্টিনা ছিল বেশ বিবর্ণ। ২৪ মিনিট পর্যন্ত বারে কোনো শট নেই। শুরুতে একচেটিয়া খেলল ক্রোয়েশিয়া। বল পজিশন ৬৫ শতাংশ। ২৪ মিনিটে প্রথম আক্রমণ কিন্তু আর্জেন্টিনারই। গোলমুখে ফার্নান্দেজের শট আটকে দিলেন ক্রোয়েট কিপার। ২৮ মিনিটে ফ্রিকিকটি বিফলে যায় লুকা মদ্রিচের। দুই মিনিট পরই পেরিসিকের বুদ্ধিদীপ্ত শট আর্জেন্টিনার গোলবারের একটু ওপর দিয়ে চলে যায়। কয়েক মিনিট পর আর্জেন্টিনা সুযোগ সৃষ্টি করল একটা। বক্সে ফাউলের শিকার হলেন ইউলিয়ান আলভারেজ। পেনাল্টি গেল আর্জেন্টিনার পক্ষে। লিওনেল মেসি এগিয়ে এলেন। দারুণ এক পেনাল্টি থেকে করলেন গোল। আর্জেন্টিনা তাতেই গেল এগিয়ে (১-০)।
৩৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে মেসির পাস থেকে বল পেয়ে জুলিয়ান আলভারেজ দুর্দান্ত ক্ষিপ্র গতিতে বল নিয়ে ডি বক্সে থাকা ক্রোয়েশিয়ার দুই ডিফেন্ডারকে টপকে ভেতরে ঢুকে লিভাকোভিচকে পরাস্ত করেন এই ম্যানসিটি স্ট্রাইকার। বিশ্বকাপে এটি তার তৃতীয় গোল। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় শিরোপাপ্রত্যাশী আর্জেন্টিনা। নকআউট পর্বে দ্বিতীয়বারের মতো হাফ টাইমের আগে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকল আর্জেন্টাইনরা। এর আগে ২০১০ সালে মেক্সিকোর বিপক্ষে নকআউট পর্বে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল আলবিসেলেস্তেরা। বিপরীতে বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া কখনো হাফ টাইমের আগে ২ গোল হজম করেনি। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা ৫টি আক্রমণ করে, যার মধ্যে ৪টি ছিল অন টার্গেট। অন্য দিকে ক্রোয়েশিয়া ৪টি শট নিলেও একটিও অন টার্গেট ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটা সময় ছিল আর্জেন্টিনাময়। বল পজিশন ক্রোয়েটদের দিকে থাকলেও মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশেহারা করে দেয় ক্রোয়েটদের রক্ষণভাগ। পাল্টা আক্রমণে ক্রোয়েশিয়া কয়েকটি সুযোগ পেলেও মেসিবাহিনীর জমাট রক্ষণে সুবিধা করতে পারেনি। বরং ৬৯ মিনিটে মেসি কারিকুরি করে একাই বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বিপদ সীমানায়। রুখতে পারেনি দুই ডিফেন্ডার। ছোট ডি এর পাশে গিয়ে মাইনাস করেন আলভারেজকে। তিনি কালবিলম্ব না করে মাটি কামড়ানো শটে বল পাঠান জালে (৩-০)। নকআউট ম্যাচে আর্জেন্টিনা ষষ্ঠবারের মতো ৩+ গোল দিয়েছে। ১৯৩০ সালে আমেরিকার বিপক্ষে ৬-১ গোলে জিতেছিল।
খেলার ধরন, কারিশমা ও নেতৃত্ব। মাঠে ও মাঠের বাইরে এই গুণাবলিতে মেসি ও মদ্রিচ দু’জনেই বিস্ময়কর। বাল্যকালে ইউরোপে পাড়ি দিতে মেসিকে সংগ্রাম করতে হয়েছিল।
অন্য দিকে মদ্রিচ বেড়ে উঠেছেন বলকান যুদ্ধ দেখে। দু’জনের একই সংগ্রামের গল্প, যা তাদের ক্যারিয়ারকে করেছে আকর্ষণীয়। দু’জনেই বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছেন। বিশ্ব আসরে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে ফাইনালে হারে মেসির আর্জেন্টিনা। আর রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে ৪-২ গোলে পরাজিত হয় ক্রোয়েশিয়া।
মেসি বার্সেলোনার হয়ে ১০টি লা লিগা, ৭টি ঘরোয়া কাপ ও ৮টি সুপার কাপ, একটি লিগ ওয়ান, ফরাসি সুপার কাপ, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, ৩টি সুপার কাপ, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ, অলিম্পিক স্বর্ণ, কনমেবল কোপা আমেরিকা, ফাইনালিসিমার ট্রফি, ৭টি ব্যালন ডি‘অর ও ২০১৪ সালে গোল্ডেন বল জিতেছেন। শুধু একটাই অপ্রাপ্তি বিশ্বকাপ ট্রফি। এবার সেটি পূরণ হওয়ার পথে।
মদ্রিচ ৩টি ক্রোয়েশিয়ান লিগ শিরোপা, একটি সুপার কাপ, দু’টি লিগ কাপ, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩টি লা লিগা, ৪টি সুপার কাপ, একটি লিগ কাপ, ৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৪টি সুপার কাপ ও ৪টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ২০১৮ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও একটি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। তার বিশ্বকাপ ট্রফি স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
সূত্র – নয়া দিগন্ত