স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে ৫টি মূল সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী - রাষ্ট্রীয় ব্লগ | রাষ্ট্রীয় ব্লগ | জাতীয় ও মানবিক ঐক্যপ্রয়াস
  • সারাদেশ

    স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে ৫টি মূল সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

      প্রতিনিধি ৭ মার্চ ২০২৩ , ১০:৪৬:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    রাষ্ট্রীয় ব্লগ ডেস্কঃ 

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে স্মার্ট, উদ্ভাবনী এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য পাঁচটি মূল সহায়তা চেয়েছেন- যা একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজকে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।

    তিনি বলেন, ‘স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ একে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।’
    কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের (কিউএনসিসি) অডিটোরিয়াম-৩ এ অনুষ্ঠিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনে “স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেটিভ সোসাইটির জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ”- শীর্ষক একটি পার্শ্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এই মূল সমর্থনগুলো উপস্থাপন করেন।

    তিনি প্রধান সহায়তার প্রথম হিসাবে উল্লেখ করেছেন- জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্যকরী প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারী খাতকে যথাযথ প্রণোদনা প্রদান।

    দ্বিতীয়টিতে, তিনি বলেন, এলডিসিগুলিতে ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তা করুন।
    তৃতীয় সহায়তা হিসেবে তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলায় পেশাদার গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি।

    তিনি আরো বলেন, চতুর্থত, উত্তরণের পরেও বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি-রাসায়নিকের জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে এলডিসি মওকুফের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখা।
    পঞ্চম সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন দুটি’র জন্যই সহায়ক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থা বিকাশে সহায়তা।

    ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরবর্তী রূপকল্পে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি অবহিত করেন।
    তিনি বলেন, এটি চারটি মূল উপাদানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি।

    শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর সরকার জনগণের কাছে ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। ওই সময়ে এটিকে ‘রূপকথা’ বলেই মনে হয়েছিল।
    শেখ হাসিনা আরো বলেন,  ‘কিন্তু, কোভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করেছে যে- আমরা আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি।

    তিনি বলেন, এই মহামারি আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে- এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য আর অপেক্ষা করা উচিৎ নয়।
    প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের বিনিয়োগ করা অপরিহার্য।’
    তিনি বলেন, যে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য এলডিসিগুলোর গড় জিডিপি ব্যয় এখনও ০.৬ শতাংশের নিচে রয়েছে ও তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে রয়েছে।

    শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘কিন্তু, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সাথে স্বল্পোন্নত দেশগুলো পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই।’
    তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণদের ভবিষ্যৎ কাজে সম্পৃক্ত করা উচিত। এর জন্য আমাদের অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব দরকার।’
    শেখ হাসিনা বলেন, এলডিসি উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে তিনটি মানদ-ের সবগুলোতেই তার যোগ্যতা প্রমাণ করবে।

    তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ২০২৬ সালের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই অন্তবর্তী কালে আমাদের সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ। জাতীয় প্রয়োজন নির্ণয়ে এলডিসির জন্য আমরা ইউএন টেকনোলজি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি।’
    তিনি বলেন, তার সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান-মনস্কতার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছে।

    তিনি আরো বলেন,‘ আমরা ইতোমধ্যে সারা দেশে অনেকগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি।’
    শেখ হাসিনা বলেন, সরকার “বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ”  এবং “জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ” চালু করেছে।
    তিনি করেন, মিশ্র শিক্ষায় নতুন করে গুরুত্বারোপের লক্ষ্য হচ্ছে সকলের জন্য আইটি দক্ষতার উন্নয়ন।

    এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভবিষ্যত শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এন্ড স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
    তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেজিষ্টার্ড আইটি ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটি রয়েছে এবং এদের আরো দক্ষ ও উন্নতকরণে সহায়তাকল্পে একটি নতুন ইনস্টিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

    প্রধানমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু-১ যোগাযোগ স্যাটেলাইট  উৎক্ষেপণের পর সরকার এখন নিজস্ব অবজারভেশন স্যাটেলাইট  উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা  করছে।

    তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাপক  জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে আগাম সতর্কতা ও আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রযুক্তিগত বিষয়সহ দেশীয়ভাবে তৈরি জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

    তিনি বলেন, “আরো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে আমাদের সহনশীলতা প্রযুক্তিতে যাওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সরকার  পরিচ্ছন্ন বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য দুটি পারমাণবিক পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করছে। আমাদের লক্ষ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক ফ্লোটিং সোলার প্যানেল, অবশোর উইন্ড টারবাইন ও গ্রিন হাইড্রোজেনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।

    তিনি বলেন, সরকার কৃষি গবেষণা সহায়তার উপর জোর দিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য ক্ষুধা মোকাবেলা এবং বহুলাংশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব করেছে।

    তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের কৃষি ও প্রাণিসম্পদকে স্মার্ট এবং পরিবেশবান্ধব করতে আরও বিনিয়োগ করছি। আমরা চুক্তিতে চাষ (কন্ট্রাক্ট ফামিং) সহ বিভিন্ন উপায়ে অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলির সাথে আমাদের ভাল কাজগুলোকে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত রয়েছি।

    চিকিৎসা গবেষণার সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের বর্তমান গুরুত্ব  প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নতুন রোগের বোঝার মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।

    তিনি বলেন, “অগ্রাহ্য করা অঞ্চলিক রোগসমূহের ওপর গবেষণার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।” তিনি আরো বলেন,“এন্টি- মাইক্রেবিয়াল রেজিষ্টেন্স-এর নতুন ধরনের চিকিৎসার উন্নয়নে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

    তিনি বলেন, সরকার  বাংলাদেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও হেল্থ সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে জরুরি ওষুধ ও ইনসুলিন সরবরাহ করছে।
    তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যু ২১ এ এবং মাতৃমৃত্যু ১৬৩ এ নামিয়ে এনেছি।” তিনি আরো বলেন,“আমাদের ওষুধ শিল্প  আমাদের স্থানীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।”
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ কালে বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রস্তুতি এই সংকট মোকাবেলা ও রোগমুক্তিতে সহায়ক হয়েছে।

    তিনি বলেন, “এই ভাইরাস সংরক্ষণের জন্য আমরা একটা জাতীয় ডাটা ইন্টেলিজে›্স প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছি।” নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার প্রয়োজনে ঐ ডিজিটাল কনটেন্টগুলো একটি ই- লানিং প্লাটফর্মে আপলোড করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের  আর্থিক সাশ্রয়ে ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে।

    সূত্র – বাসস

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ